বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০০৯

যখন বেলা শেষের ছায়ায়...(টিভি নাট্যরূপ)

(দ্রষ্টব্য: এই নাটকের পাত্রপাত্রীরা প্রায় সবাই দিনাজপুর থেকে আগত হবার সুবাদে নাটকের অধিকাংশ সংলাপ দিনাজপুরের গ্রামীণ কথ্যভাষায় লিখিত। আশা করি পাঠকের জন্য খুব বেশি দূর্বোধ্য হবে না।)


দৃশ্য: এক
এয়ারপোর্ট ভবনের প্রবেশপথ


[দুটো ট্যাক্সি ক্যাবে করে একদল লোক এসে পৌঁছুবে, সিকিউরিটির বাধার মুখে রবিন এবং কাজল ছাড়া আর সবাইকে ট্যাক্সি থেকে নেমে যেতে হবে। ট্যাক্সি দুটো টার্মিনাল ভবনে ঢুকে গেলে বাকিরা হত-বিহ্বল চেহারায় দাঁড়িয়ে থাকবে]

ইন্টারকাট

[রবিন ও কাজল ট্যাক্সি থেকে বেশ বড় কয়েকটা লাগেজ নামাচ্ছে]

রবিন : এইটা ফির কের্‌কম হইল্‌! অরা যদিল ঐঠে খাড়া থাকে তো আসিয়া কাম কী হইল্‌?
কাজল : তুই চুপ করি বসেক তো অ্যালা, ঐলা মুই দেখোছোঁ।
রবিন : কেম্বা করি কী দেখিবু? পেসেঞ্জার ছাড়া বেলে কাকো ঢুকিবা দিবা নাহায়!

ইন্টারকাট

[দলের সবাই লোহার গ্রীলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, বোরকা পরা রবিনের মা ক্রমাগত কাঁদছেন, রবিনের বাবা’ও বিচলিত, ছোট ভাইবোন, শাহেদ-কামাল কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তবে সবচে’ অস্থির অবস্থা হলো আকবর চাচা’র]

আকবর : এ-এ-শ্! কাকো ঢুকিবা দিবা নাহায়? কাথা একখান কহি দিল্‌ আর হই গেইল্‌! হামেরা এদ্দূর পথ ছুটি আসিনু কি এত্তি খাড়া থাকিবা তনে?
রশীদ : মোর ছোয়াকোনা আমরিকাত চলি যাছে, মুই তাক এত্তি খাড়া থাকি বিদায় করিম- এইটা কী বিচার?
আকবর : কান্দিনা বারে কান্দি না। মুই দেখোছোঁ কিবা করি ভিতরত ঢুকি পড়া যায়।

ইন্টারকাট

কাজল : তোক কিছু দেখিবা হোবে না। তুই এত্তি বেগ-বোচকা ধরি খাড়া থাক। মোক্‌ অ্যালা বিরইল্যা বেরেনে কাম করিবা দে।
রবিন : কী করিবু তুই?
কাজল : খাড়া থাকি দেখেক।

[কাজল চলে যায়, টাইটেল মিউজিক শুরু হয়]

টাইটেল

[টাইটেলের ভেতরে দেখা যায়, সিকিউরিটির লোকজনদের সাথে কাজল নানান ভঙ্গিমায় হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছে, বিশেষ কায়দায় হাত মেলাচ্ছে, বাকিরা সবাই গেট পার হয়ে ভেতরে ঢুকছে। আবার দেখা যাবে, কাজল কোত্থেকে এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে ধরে নিয়ে আসবে, তিনি রবিনসহ গোটা দলটাকে মেইন বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকিয়ে দেবেন। সবাই সিকিউরিটি চেকপোস্ট পার হয়ে ভেতরে এলে টাইটেল শেষ হবে]


দৃশ্য: দুই
এয়ারপোর্ট ভবনের ভেতরে


[দলের সবাই এয়ারপোর্ট বিল্ডিংয়ের ভেতরে এসে বসেছে। রবিন আর কাজল ছাড়া বাকি সবাইকে দেখা যাবে]

আকবর : হয় বারে, ঠিকে কহিছেন। এই দ্যাশত তামাল্লায় সম্ভব। খালি সিস্টেম করি চলিবা হোবে।
রশীদ : ঠিকে ঠিকে। তয় ছোয়াকোনার বেরেন আছে যা হউক। কেম্বা করি সবাকে মেনেস করি ফালাইছে, দেখিছেন?
আকবর : মেনেস তো আর অয় করে নাই, মেনেস কইছে তো পাইসা। পাইসায় করে কাম, মদ্দের হয় নাম।
রশীদ : কী বারে কামাল, রবিন কোটে? অয় কাজলক ধরি কইত্‌ গেইল বারে?
কামাল : ফ্লাইটের খোঁজ নিতে গেছে।
আকবর : এইটা খোঁজ নিবারে ফির অত্তি যাবা হোবে? কাখো পুছ করিলে হইল!
শাহেদ : এইটা আপনার দিনাজপুর না চাচা, বাহাদুর বাজারে খাড়া থাকি পুছ করবেন, ঢাকা মেলের খবর হইছে? আর যে সে লোকে কই দিবে।

[আকবর অপ্রস্তুত হয়ে যাবেন, কামাল হেসে উঠবে। তাই দেখে রশীদ বিরক্ত হবেন। তিনি অকারণেই কামালকে বকা দিবেন]

রশীদ : রবিন ওত্তি ফেলাইটের খোঁজ নিবা গেইল্‌, কাজল সবারে ভিতরে ঢুকা মেনেস করিল, তোমরা খাড়া থাকিলেন ক্যান বারে? তোমরা কি এইঠে খাড়া থাকিবা তনে আইছেন?
আকবর : রশীদ মিয়া, এর্‌কম করি কাথা কইছেন কেন বারে? তোমার ছোয়া কি তোমার একারে নাকি? অদেরও তো দোস্ত হোবে নাকি? তোমার ছোয়া আমরিকাকাত চলি যাছে, তাই দেখি অরা আইছে বিদায় দিবা; তাতে তোমার কেন জ্বলেছে বারে?
রশীদ : মোর জ্বলিবে কেন বারে, মোর তো আমোদ নাগেছে। মোর ছোয়া মোক ছাড়ি সাত সমুদ্দুর পার হই চলি যাছে, মোর তো আমোদ নাগেছে!
আকবর : আমোদ তো নাগিবেই! আশপাশের দশ বিশটা গেরাম খুঁজি দেখেক, এরকম আর একখান ছোয়া খুঁজি পাবেন নাহায়। কী কাথা বারে, মোর বয়েস পোচ্‌পান্ন ছাড়ি গেইল, মোর অ্যালাও চট্টগ্রামেতই যাওয়া হলি না বারে, আর হামারে রবিন মাত্র পঁচিশ বচ্ছর বয়সে আমরিকার মতোন দ্যাশত চলি যাছে!
কামাল : ডিভি লাগলে ওরকম যাওয়াই যায়...
আকবর : এ...শ্‌...! কাথা একখান কহি দিল্‌, আর হই গেইল্‌! কেন বারে, মোর দ্যাশত কি ডিভি এইটা পয়লাবার লাগিল নাকি? সামাদ মিয়ার ছোয়াটাও তো বেলে ডিভি পাইছোলো, তোমারে শাহিনা বু’র স্বামী তো এখন যাছে কি তখন যাছে। আসাদ মুন্সীর বেটার বেলে কাগজপত্র তামাল্লায় ঠিক, খালি পেলেনেত কোন ছিটটাত বসিবে- এইটা ঠিক করিবা পাছে না... এইল্লা কাথা শুনি শুনি মুই মানুষ হই গেনু! “ডিভি লাগেলে ওরকম যাওয়াই যায়!”

[রবিন আর কাজলকে দেখা যাবে ব্যস্ত ভঙ্গিতে এদিকেই আসছে। ওরা কাছে আসতেই আকবর গলা চড়িয়ে ডাকবেন]

আকবর : কী হইল বারে, তোমারে ফেলাইট কতদূর?
রবিন : ফ্লাইট চার-পাঁচ ঘন্টা লেট হবে চাচা। টেকনিক্যাল প্রবলেম।
রশীদ : কী প্রবলেম?
রবিন : বললো তো টেকনিক্যাল....
আকবর : হয় বারে! গেট পারাইতে টেকনিক, বিল্ডিংয়ে ঢুকিবা টেকনিক, এখন ফির বেলে পেলেনত উঠিবাতনেও টেকনিক করিবা হোবে!
কাজল : এই টেকনিক সেই টেকনিক নাহায় চাচা।
আকবর : নাহায় তো ফের কি? গোটাল দুনিয়াটাই হই যাছে টেকনিকাল!
কাজল : আরে চাচা, আপনি যেইটা ভাবেছেন, সেইটা নাহায়, ওমার বিমানেত কোন যন্ত্রপাতি নষ্ট হই থাকিবা পারে, চাক্কার মধ্যে হাওয়া কম হই গেইছে হয়তবা, পাইলট আসিবারে লেট করেছে হয়তো...

[শেষ দিকের কথাগুলো ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাবে, কামালকে দেখা যাবে ভীষণ চিন্তিত ভঙ্গিতে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে তার ভেতর থেকে একটা বাস-টিকেট বের করছে। টিকেটটা উল্টে-পাল্টে সে দেখতে থাকবে আর দলের বাকি সবার দিকে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। সবাই কী নিয়ে কথা বলছে তা যেন তার মাথায় ঢুকবে না। এক পর্যায়ে সে আপন মনে হাঁটতে হাঁটতে দলের সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে]

দৃশ্য: তিন
দলের অন্য সবার থেকে পৃথক কোন স্থান

[কামাল দলের সবার কাছ থেকে একটু আলাদা হয়ে আপন খেয়ালে হাঁটছিলো, হঠাৎ শুনতে পাবে শাহেদ তাকে ডাকছে। সে ফিরে তাকাবে]

শাহেদ : কিরে, কই যাস? তোর হইছে কী?
কামাল : কিছু হয় নাই।
শাহেদ : কিছু তো মনে হয় হইছে। হঠাৎ তুই চলে আসলি এই দিকে? কী চিন্তা করতেছিস?
কামাল : [কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকার পর] রবিনের ফ্লাইট দেরি হবে?
শাহেদ : তাই তো বললো। ক্যান তুই শুনিস নাই? তোর সামনেই তো বললো।
কামাল : [বিরক্তিসুচক শব্দ করবে]
শাহেদ : তোর সমস্যাটা কী? লেট করলেই তো ভালো। আবার কবে আসে না আসে তার ঠিক আছে? একটু বেশি সময় থেকে গেল! আমার তো মনে হয় আবার আসেই কিনা!
কামাল : সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আমার তো দশটার বাসে টিকিট করা আছে। দশটার মধ্যে যদি ওর ফ্লাইট ওকে না হয়?
শাহেদ : আরে, দশটা বাজতে এখনও অনেক দেরি।
কামাল : কিসের দেরি! এমনিতেই ফ্লাইট ছাড়ার কথা সাড়ে চারটায়। পাঁচ ঘন্টা লেট মানে কি? সাড়ে নয়টা। বাংলাদেশের লেট আবার ঘড়ি-ঘন্টা মানে নাকি?
শাহেদ : [কিছুক্ষণ চুপচাপ ভাবার পর] তুই পন্ডিতি করে টিকিট করতে গেছিলি ক্যান? বুকিং দিয়ে রাখতি?
কামাল : আরে তখন কি বুঝছি নাকি এরকম হবে। তাছাড়া... টাকা থাকতেছে না।
শাহেদ : থাকতেছে না মানে? কই যাচ্ছে?
কামাল : [বিরক্ত, উত্তেজিত] উড়ে যাচ্ছে। দিনাজপুর থেকে ঢাকা আসতেই ছয়শ টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। টিকিট না করলে যাওয়ার ভাড়াও থাকতো না।
শাহেদ : এত কী খরচ করলি?
কামাল : কী আবার, যা দেখি তাই কিনতে ইচ্ছা করে। রবিনেক একটা মানিব্যাগ গিফট করলাম, দেড়শ’ টাকা দাম। রবিন কইলো, আইসক্রিম খাবি?... আইসক্রিম খায়ে জোর করে বিল দিবার যায়ে দেখি বিল হইছে আশি টাকা! এইটুক দুই বাটি আইসক্রিমের দাম আশি টাকা!

[রবিন গলা চড়িয়ে ডাকতেই শাহেদ কিছু না বলে চলে যাবে। কামাল কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে উল্টো ঘুরে হাটতে থাকবে। চেয়ারে বসে থাকা সাজ্জাদের OS থেকে তার উদ্দেশ্যবিহীন হাটতে থাকা দেখা যাবে। সেখান থেকে ফ্রেম ওয়াইড হলে সাজ্জাদকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রবিনদের দলটার দিকে তাকাতে দেখা যাবে। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে ক্যামেরা প্যান করে দলটাকে ধরবে। কাছাকাছি আসতেই রশীদ সাহেবের কথা শোনা যাবে]

রশীদ : বুঝিলু বাবা, ভালো-মন্দ তামাল্লায় নিজের কাছে। নিজে ঠিক তো জগত ঠিক। নামাজ কালাম ঠিকমতে পড়িবু...
আকবর : ঠিকে কাথা। ঐঠেও কিন্তুক আজকাল অনেক মোছলমান আছে বারে। মর্জিদও হই গেইছে। আরে সেকি আলিশান মর্জিদ বারে! জুম্মার নামাজ মর্জিদে যায়ে পড়িবু। ঐঠেকার মর্জিদ হামারে মতন নাহায়, ঐঠে পেশাবখানাতও এছি ফিট করি থুইছে! এক্কেরে লিগাল কাথা বিয়াই, হেভি আরামের জাগা! একদম ঠান্ডা...
কাজল : ঐ দেশে ঠান্ডাতে আরাম নাই চাচা, সারা দেশটাই ঠান্ডা। আমেরিকার ঠান্ডা মানে কষ্ট!
আকবর : [অপ্রস্তুত] ঠিকে কহিছেন বারে, ঠিকে কহিছেন। কিন্তু বিয়াই, হামারে দ্যাশের মতোন ওত্তি মর্জিদে জুতা-সেন্ডেল চুরি হয়না, এইটা কিন্তুক ঠিক।
রনি : এ ভাই, তুই কিন্তুক যায়েই মোর মোবাইল কিনি পাঠাবু। আর সিডি ওয়াকম্যান একটা।
রীতা : মোর জুতা ভুলিবু না, ভাই। আর একটা কেমেরা দিবু, ফিলিম ছাড়া ছবি উঠে ঐগুলা।
রনি : আরি মোক কোলে কম্পিউটার কিনি দিবা হোবে। সজিবের যেরকম আছে, ওরকম- ছেমছাং
শাহেদ : ছেমছাং নারে বোকা, স্যামসাং। আর ওইটা কম্পিউটারের নাম নারে, ওইটা তো মনিটরের নাম।
রনি : নাহায়, মোক ঐল্লাই দিবা হোবে।
রশীদ : তোরা থামিশ অ্যালা! উল্টা পাল্টা খরচ করিননা বারে। ঐঠে নামিয়াই যা হোউক একখান কাম-কাজ জুটাই নিও। ডলার পাঠাইতে দেরি করিও না। মোর তো দেখি যাছেন, আর কোন উপায় নাই, তামাল্লায় বেচিয়া তোমারে হাতোত দিনু। ডলার না পাঠাইলে না খায়ে থাকিবা হোবে। [রবিনের মা বোরকার আড়াল থেকে নতুন করে কাঁদতে শুরু করবেন] আহারে তুমি ফের কান্দাকাটি শুরু কইছেন কেন বারে?
মা : দেখি শুনি সাবধানে যাইস বাবা, আস্তাত (রাস্তায়) উল্টাপাল্টা কিছু খাইস না... ঠিকঠাক মতে পৌছায় চিঠি দিবু...
রশীদ : এইল্লা কাথা কহিবা বহুত টাইম পাবেন। ফেলাইটের মেলা দেরি।
রবীন : কামাল কই রে? অক তো দেখি না
শাহেদ : অঁয় পড়েছে মাইনকা চিপায়
কাজল : কেন, অর ফের কী হইল?
শাহেদ : শুনিস পরে
রবিন : দেখ তো কই গেল?
কাজল : ওই তো আসতেছে।
শাহেদ : দোস্ত তোমার কপালটা কিন্তু হেভি ভালো। শুরুতেই ক্যালিফোর্নিয়ার মতো শহরে থাকতে পারতেছো। ডিভি জিতে যারা যায়, তাদের বলে শুরুতে টেকসাস ক্যানসাস এইসব বিরান জায়গায় পাঠায়ে দেয়।
কামাল : টেকসাস ক্যানসাস এইগুলা বিরান জাগা তোরে কে কইল?
শাহেদ : কেউ কয় নাই, এমনিই কইলাম।
কামাল : এমনি এমনি একটা কথা কয়ে ফেললি?
শাহেদ : কইলে তোর অসুবিধা কী? তাছাড়া আমি ইংলিশ ছবিতে দেখছি। কেন, তুই দেখিস নাই? ওয়েস্টার্ন গল্পে পড়িস নাই?
কামাল : ছবিতে দেখলে আর গল্পে পড়লেই হয়ে গেল? ছবিতে গল্পে সবকিছু সত্যি থাকে নাকি?
কাজল : যাই বলিস রবিন, তোর ভাগ্য কিন্তু আসলেই ভালো। তোর নামটা নিয়ে অন্তত কোন ক্যাচাল হবে না। শুরু থেকেই তোর নামটা ইংরেজী ধরণের। নাইলে আমেরিকানরাতো বাংলা নামগুলা উচ্চারণই করতে পারে না। কেন পড়িস নাই, হুমায়ূন আহমেদকে উচ্চারণ করে ‘হিউমাউন আহামাড’!
[শাহেদ ছাড়া সবাই হেসে উঠবে]
শাহেদ : হুমায়ূন আহমেদ কি বাংলা নাম নাকি? এটা তো আরবি নাম!

[সবাই আবারও হেসে উঠবে]

আকবর : কামের কাথা শোনেক আগোতে। তোমার পেলেন কি ডাইরেক?
রবিন : না চাচা, এখান থেকে দিল্লী যাবে। ওখানে দু’ঘন্টার ব্রেক। আরো প্যাসেঞ্জার উঠবে। তারপর সোজা নিউইয়র্ক।
আকবর : তারপর?
রবিন : তারপর নিউইয়র্ক থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার প্লেনে উঠতে হবে।
আকবর : ওত্তি ক্যালিফোর্নিয়ার পেলেন আলাদা তো? তাইলে ওইটা ঠিকঠাক মতে খুঁজি বাইর করিবা হোবে। তার আগোতে মাল সামানা যা আছে, তামাল্লায় গোনে গোনে বুঝি নিবা হোবে। আর পেলেন খুঁজি না পাইলে এত্তি ওত্তি পুছ করিবেন। কাখো না পাইলে পুলিশোক যাই পুছ করিবেন। ওত্তিকার পুলিশ হামারে মতোন নাহায়, ওরা পাবলিকেক হেল্প করিবাতনে রেডি থাকে। বিদেশী দেখিলে তাক আব্বা কই ডাকে, বুঝিলু? আর পেলেন খুঁজি না পাইলে কান্দি ভরাইয়েন না বারে, পেলেনেতই যাবা হোবে এরকম তো কাথা নাহায়। বাসেত চড়ি যাবা পাবেন, বাসের সিট পেলেনের থাকি কম নাহায়। আর যে আস্তা (রাস্তা)! আলিশান কারবার বারে! আস্তা এর্‌কম ফেলাট, বাসেত চড়ি যাছেন না পেলেনেতই আছেন বুঝা পাওয়াই মুশকিল। ...মোর সমুন্ধির মামা শ্বশুর আমরিকাত থাকে। গেল বৎসর আইছোলো, ওরঠে শুনিনু...
রবিন : কাজল, তোর ঠিক পেছনে.. আস্তে! আস্তে ঘুরিস, যেন্‌ টের না পায়। দ্যাখ, একটা লোক বসি আছে। অনেকক্ষণ ধরি বেটা এদিক লক্ষ্য করি আছে।

[এক এক করে সবাই সাজ্জাদকে দেখবে, সাজ্জাদ যেন বুঝতে পারবে, তাকে সবাই দেখছে; সে ভীষণ রকম নির্বিকার থাকবে। সবাই আবার নিজের নিজের জায়গায় ফিরে আসবে]

শাহেদ : ছিনতাইকারি নয় তো?
কামাল : দূর, ছিনতাইকারি’র চেহারা এরকম হয় নাকি?
শাহেদ : তুই মনে হয় ছিনতাইকারি দেখছিস কতো?
কামাল : বাস্তবে দেখি নাই তো কি, ফিল্মে দেখছিনা? নাটকে?
শাহেদ : ফিল্মে নাটকে দেখলেই হয়ে গেল? ফিল্মে নাটকে সবকিছু সত্যি দেখায় নাকি?
আকবর : হয় বারে পেপারত পড়েন নাই, এয়ারপোর্টে দুধ্বষ্য ডাকাতি, ডুবাইগামী আর নয়ত সৌদি ফেরত যাত্রীর সর্বস্ব লুট।
রবিন : ঐগুলা অবশ্য এয়ারপোর্টের বাইরে ঘটে।
রশীদ : তালে ঠিক এত্তি বসি আছে মক্কেল ধরিবা তনে। মক্কেল এইঠে থাকি বাইর হইলেই তাক ফলো করি যায়ে কাম সারিবে।
কাজল : আগোত থাকি এইলা ভাবেন নাতো চাচা, নাও হবার পারে। পেসেঞ্জারও তো হবার পারে।
আকবর : পেসেঞ্জার হলি মাল-সামানা থাকিল নাহায়?
কামাল : এইল্লা বড় ব্যবসায়ীদের ব্যাপার কী বুঝবেন? এই ফ্লাইটে দিল্লী যাবে, মিটিং শেষ করি ফির রাতের ফ্লাইটে ফেরত আসবে।
আকবর : তা’ও হবার পারে। যাহোক রবিন শোনেক, একটা কাথা সবসময় মনে রাখিবা হোবে। আমরিকাত দুইটা জিনিস হইল ফিরি। এক হইল মোদ, আর দুই নম্বরটা হইল বেটিছোয়া। দোনোটাই ডেনজোরাস। ধইছেন কি মইছেন। ধলা চামেড়ার মাগি দেখি পাগেলা হই যান না বারে। ঐল্লা দ্যাশের তামাল্লার এইডোস ধইছে- এইটা খেয়াল রাখিবা হোবে। এইবার যা হোউক, টপ্পাস করি ডাক পইছে, চলি যাছেন, যান। কিন্তুক ছয় মাসের মধ্যে দ্যাশে আসি বেহা করি বহু নি যাইয়ো। তখন আর টেনশন থাকিবে নাহায়। আর যেহেতু শীতের দ্যাশ, শরীল গরম রাখিবাতনে মোদ খাবা হোবে, কম কম করি খাবেন। ঐল্লা দ্যাশোত অল্প করি মোদ খাওয়াটা ফ্যাশোন। কিন্তুক নেশা করিবাতনে মোদ ধইছেন তো মইছেন।

[রবিনের মা নতুন করে আবার কান্না শুরু করবেন। রবিনের বাবা তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। আকবর চাচা একটুক্ষণ বিব্রত থাকার পর কাজল আর রবিনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন, রশীদ সাহেবের মোবাইল বেজে উঠবে, তিনি ফোনে প্রায় চিৎকার করে কথা বলতে থাকবেন। এদিকে রনি রীতা বার বার ভাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকবে, তাদের নানান রকম দাবী-দাওয়া স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবে]

রশীদ : হ্যালো? কে বিয়াই? ... জোরে বলেন, শুনা যাছে না। অ্যাঁ.. হামেরা তো এয়ারপোর্টের ভিতরোত। ...না না... অ্যাঁ? বুঝা পাই না.. হ্যাঁ হ্যাঁ বলেন...কি? টাঙ্গাইল? সন্ধ্যা তো হই যাবে বারে... না না আসেন, ওত্তি ফেলাইট লেট আছে... হ্যাঁ হ্যাঁ, টেরেনের মতোন পেলেনও লেট করে...

[কামাল আর শাহেদ একপাশে সরে আসবে। দুজন পাশাপাশি বসবে, তাদের ঠিক উল্টেদিকে যে সাজ্জাদ বসে আছে, এটা খেয়াল করবে না]

কামাল : শাহেদ, তোর কাছে টাকা কত আছে?
শাহেদ : আমার কাছেও তোর মতোই অবস্থা।
কামাল : কাজল আজকে যাবে না?
শাহেদ : না। ও তো দোকানের মাল কিনবে। দুদিন পরে যাবে। তুই কাজলেক কয়ে দেখ।
কামাল : না না, অক কিছু কওয়া যাবে না।
শাহেদ : কেন? অক কইতে সমস্যা কি?
কামাল : আছে সমস্যা। তুই বুঝবি না। তাছাড়া...
শাহেদ : তাছাড়া কি?

[এর মধ্যে ওদের পেছন থেকে সাজ্জাদ উঠে কোন একদিকে চলে যাবে, ব্যাপারটা শাহেদ বা কামাল কেউ খেয়াল করবে না]

কামাল : এর মধ্যেই ওর কাছ থেকে তিনশ টাকা ধার নিছি।
শাহেদ : কইস কি! ... তোর শালা আসারই দরকার ছিলো না।
কামাল : আমারও তাই মনে হচ্ছে।
শাহেদ : মনে হচ্ছে মানে? মনে হওয়া হওয়ির কি আছে। শালা তুই বন্ধুক বিদায় দিবার আসছিস না ধারের টাকায় ফুটানী মারবার আসছিস?
কামাল : কথা কইস না তো! এমনিতেই মেজাজ খারাপ আছে।
শাহেদ : এ-শ্‌-! পকেটে নাই পাত্তি, মেজাজের পইলতায় বাত্তি! তোর মেজাজ নিয়া তুই বসি থাক, মোর কাম আছে।

[শাহেদ উঠে চলে যাবে, কামাল কিছুক্ষণ তার চলে যাওয়া দেখবে, তারপর নিজেও উঠে শাহেদের উল্টোদিকে হাঁটতে থাকবে]


সাজ্জাদকে দেখা যাবে ইনফর্মেশন ডেস্কের কারো সাথে কথা বলছে। সে কথা শেষ করবার আগেই কামালকে দেখবে, কামাল টয়লেটের দিকে যাচ্ছে। সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কামালকে অনুসরণ করবে]

[কামাল দাঁড়িয়ে আছে ইউরিনালে, তার ঠিক পাশের ইউরিনালে গিয়ে দাঁড়াবে সাজ্জাদ]

সাজ্জাদ : কেমন আছেন?
কামাল : [অপ্রস্তুত, পুরোপুরি কফিউজড]
সাজ্জাদ : ফ্লাইট যতটা লেট হবার কথা ছিলো, ততোটা হবে না। ধরুন বড়জোর ঘন্টা খানেক। অবশ্য কনফার্ম হতে আরো কিছুক্ষণ সময় লাগবে, তারপরই অফিশিয়ালি অ্যানাউন্স করবে।
কামাল : কিন্তু আপনি জানলেন কীভাবে? তাছাড়া আমরা যে ঐ ফ্লাইটেরই অপেক্ষায় আছি, তাই বা কে বললো?
সাজ্জাদ : প্রথমটা জেনেছি অফিশিয়াল সূত্রে। আমার বন্ধু এখানে চাকরি করে, সে এখন ডিউটিতে আছে। তাছাড়া আমি তো প্রায়ই এয়ারপোর্টে এসে বসে থাকি, অনেকের সাথেই বেশ খাতির হয়ে গেছে। এটুকু খবর বের করা কোন ব্যাপারই না।... আর দ্বিতীয়টা বলেছেন আপনিই।
কামাল : আমি?
সাজ্জাদ : ইয়েস! তবে আমাকে নয়, আপনার বন্ধু শাহেদকে।
কামাল : আমার বন্ধুর নাম...
সাজ্জাদ : সেটাও জেনেছি আপনার কথা থেকেই। বাস মিস করবার টেনশনে আপনারা আমাকে খেয়ালই করেননি, আমি আপনাদের ঠিক পেছনেই বসে ছিলাম। আপনার নামটা অবশ্য জানা হয়নি, কারণ আপনার বন্ধু সেটা উচ্চারণ করেন নি।
কামাল : কামাল
সাজ্জাদ : আমি সাজ্জাদ। বাই দ্য ওয়ে, আপনার বাস মিস করার টেনশন তো দূর করলাম, এখন বলেন, কী খাওয়াবেন?
কামাল : এমনভাবে বলছেন যেন টেকনিক্যাল প্রবলেমটা আপনিই সলভ করেছেন?
সাজ্জাদ : হেই, আই’ম্‌ জাস্ট কিডিং, ডোন্ট টেক ইট সিরিয়াসলি, হা হা হা...। চলুন কোথাও গিয়ে বসি।

[সাজ্জাদ এগিয়ে যাবে, কামাল কিচক্ষণ তার গমণপথের দিকে তাকিয়ে থেকে অনিচ্ছাসত্বেও অনুসরণ করবে]


[রশীদ সাহেবের হাতের মোবাইল বেজে উঠবে, তিনি রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে লাইন কেটে দিবে। তিনি হ্যালো হ্যালো করতেই থাকবেন, এর প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে রবিনের মধ্যে। বোঝা যাবে কলটা আসলে তার ছিলো। সে অস্থির বোধ করবে, একটু পরে বাবার কাছে ফোনটা চাইবে। কিন্তু রশীদ সাহেব ফোন দিতে চাইবেন না। এর মধ্যে আবারও কল আসবে, এবার রবিন মোটামুটি জোর করে ফোনটা নিয়ে নিবে, কিন্তু ততোক্ষণে লাইন কেটে গেছে। রবিন বাবাকে আড়াল করে নাম্বারটা পড়বে এবং মুখস্থ করে নিয়ে ফোন দিয়ে দিবে। তারপর কাজলকে নিয়ে একদিকে চলে যাবে]

আকবর : কী হইল বারে, ছোয়া কোনা ফোন করিবা চহেছোলো, দিলু না কেন বারে?
রশীদ : মোবাইল ধরি কোনটে আলাপ করিবে, বুঝা পান নাই বিয়াই?... এই চেংড়ি কোনাই অক খাইল্‌ বারে!
আকবর : আর তো চিন্তার কিছু নাই! তোমার ছোয়াল তো চলি যাছে আমরিকাত। ওত্তি যায়ে কি আর এইল্লা প্রেম-পিরীতি স্মরণ থাকিবে?
রশীদ : মোর তো ঐঠেই চিন্তা। ওত্তি মন লাগাই থাকিবা পারে তো হয়।

[সাজ্জাদ ও কামাল দল থেকে অনেকটা দূরে বসে আছে পাশাপাশি। তাদের অবস্থান থেকে দলটাকে দেখা যায়, কিন্তু দলের অন্যরা পারতপক্ষে তাদেরকে লক্ষ্য করবে না]

সাজ্জাদ : আচ্ছা কামাল সাহেব, এভাবে বিদায় দিতে না আসলে হতো না? বিশেষ করে এই ফেয়ারওয়েল টিমে আপনাদের, মানে এই... বন্ধুদের উপস্থিতির খুব কি আবশ্যকতা ছিলো?
কামাল : দেখুন, রবিন আমার সবচে’ প্রিয় বন্ধু। সে আমেরিকায় বেড়াতে যাচ্ছেনা, চিরতরে থাকতে যাচ্ছে। আর কবে দেখা হবে, কে জানে। সে চলে যাচ্ছে, আমি তাকে বিদায় দিবো না?
সাজ্জাদ : কেন নয়? নিশ্চয়ই দেবেন। আমার প্রশ্ন আসলে এটা নয়। আমি জানতে চাচ্ছিলাম, বিদায়টা কি দিনাজপুরে থেকেই দেয়া যেতো না? দিনাজপুর রেল স্টেশনে কি বাস টার্মিনালে, কিংবা ধরুন আপনার কিংবা রবিন সাহেবের বাসাতেই...?
কামাল : আমার বন্ধু আমেরিকায় চলে যাচ্ছে, আর আমি তাকে বিদায় জানাতে ঢাকা পর্যন্ত আসবো না?
সাজ্জাদ : আসবেন বৈকি, এসেই তো গেছেন। কিন্তু সেটা কতটা যৌক্তিক, তা কি ভেবে দেখেছেন? “তুমি চলে যাচ্ছো, আর দেখা হবে না”- এটা কি ঘরে বসেই মেনে নেয়া যেতো না? তবু আমরা আমাদের সীমিত সঞ্চয় ব্যয় করে পেছন পেছন ছুটে যাই, যদ্দূর যেতে পারি আরকি! তারপর একসময় ডান হাতের কব্জিটা ডানে বামে হেলিয়ে দুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিরে যাই। বিদায়ীর সঙ্গী হবার এই যে অভিনয়, কতটা দরকার এর?
কামাল : আপনি এটাকে অভিনয় বলছেন কেন? আবেগের কি কোনই মূল্য নেই?
সাজ্জাদ : নিশ্চয়ই আছে। প্রশ্নটা আবেগ নিয়ে নয়, আবেগ প্রকাশের ধরণ নিয়ে। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি, আপনি আপনার বন্ধুর সাথে ঢাকা পর্যন্ত এলেন, বাকিটুকু যাচ্ছেন না কেন?
কামাল : কী অদ্ভুত কথা! রবিনের কাছে আমেরিকা যাবার টিকিট আছে, ভিসা আছে। আমার তো পাসপোর্টই নাই, আমি কীভাবে যাবো?
সাজ্জাদ : অর্থাৎ বাকিটুকু যাবার সামর্থ থাকলে যেতেন?
কামাল : দেখুন, রবিন যাচ্ছে তার নিজের কাজে, সে সেখানে থাকতে যাচ্ছে। আমি তার সাথে গিয়ে কী করবো?
সাজ্জাদ : কেন, ঢাকা পর্যন্ত যখন এসেছেন, তখন আমেরিকা পর্যন্তও সাথে যান, আমেরিকায় গিয়ে বন্ধুকে নামিয়ে দিয়ে আসেন! ... আচ্ছা ধরুন, ফ্লাইট আজ রাত দশটার আগে ওকে হবে না। আপনি কী করবেন? টিকেট ক্যানসেল করে থেকে যাবেন?
কামাল : [বিব্রত] দেখুন, আপনি তো জেনেই গেছেন, আমি আসলে সে রকম প্রস্তুতি নিয়ে আসিনি। ...কিন্তু সবার ক্ষেত্রে তো তা নয়। যেমন ধরুন কাজল, সে তো থেকে যেতে পারে। ইনফ্যাক্ট সে থাকবেও, দুই দিন পরে যাবে।
সাজ্জাদ : কিন্তু রবিন তো আজকেই চলে যাচ্ছে, তাহলে কাজল কেন আরো দুদিন পরে যাবে? অর্থাৎ সে এসেছিলো নিজের কাজে, এই সুযোগে বন্ধুকে সি-অফ করলো। দ্যাটস্‌ ইন্টেলিজেন্ট!
কামাল : তার মানে বলতে চাচ্ছেন আমার আসাটা বোকামী হয়েছে?
সাজ্জাদ : আমি কিছুই বলতে না চাইলেও সত্যি কিন্তু এটাই দাঁড়াচ্ছে!

[নতুন করে আরো দু’তিনজন আত্মীয় স্বজন বিচিত্র ধরণের পোঁটলা-পুঁটলি নিয়ে দেখা করতে আসবে। রশীদ তাদের দেখে আনন্দিত হবেন]

রশীদ : কে বারে মনসুর, ভিতরে তোমাক ঢুকিবা দিল? কেম্বা করি ঢুকিলেন বারে?
মনসুর : আর কইয়েন না খালু, আসিবা তো দিবারে চাহে না, বহুত কাউয়া-ক্যাচাল করি শ্যাষে আড়াইশ টাকা পারহেড দি’ ঢুকিবা হইল্। তা রবিন কোটে?
মা : কোটে ফির? ওত্তি দ্যাখেক, “আও কাড়া মেশিন” (কথা বলার যন্ত্র, অর্থাৎ মোবাইল ফোন) কানেত ধরি পিরীতের আলাপ জুড়েছে! এই চেংড়ি কোনাই মোর সর্বনাশ করিল! মোক এক্কেলে আস্তাত নামাই দিল বারে!
রশীদ : আহ্‌! একনা হুশ করি কাথা কহেক। বাহিরের মানুষ সাথোত আছে- একনা উদ্দিশ করেন।
আকবর : তা মনসুর মামু, হতোত এইল্লা কী?
মনসুর : এই টিনের ভিতর আছে চাল কুমড়ার বড়ি, আর ভুট্টার খই। আর এইটার মধ্যে ওলের বড়ি।
কাজল : [ইতিমধ্যে সেখানে উপস্থিত হবে] এইল্লা কাস্টমসে আটকাই দিবে, ভাই; পার করিবা পাবেন না...।

[সাজ্জাদ হঠাৎ নড়েচড়ে বসে কামালের দিকে তাকাবে]

সাজ্জাদ : আপনাকে শুরুর দিকে বলেছিলাম আমি প্রায়ই এয়ারপোর্টে এসে বসে থাকি। কেন তা কি জানেন?
কামাল : [বিড়বিড় করে, প্রায় অস্পষ্ট স্বরে] মক্কেলের খোঁজে
সাজ্জাদ : জ্বী?
কামাল : জ্বী না, কিছু না! .. কেন?
সাজ্জাদ : মানুষ দেখতে। প্রতিদিন নানান মানুষ নানান দেশ থেকে আসছে, যাচ্ছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে কিংবা বিদায় জানাতে আসছে কত মানুষ! কেউ আসছে প্রাণের টানে, কেউ কর্তব্যবোধ থেকে, কেউবা অযথাই... কেন? কেন এত ব্যকুলতা! কী তাদের সম্পর্ক? কিসের এত ব্যগ্রতা?... আমি বসে বসে দেখি আর অনুভব-আবিস্কারের চেষ্টা করি, যাত্রী আর তার সঙ্গীদের মধ্যে সম্পর্কটা কী? সেটা কতটা গভীর? ... নাকি শুধুই ফর্মালিটি?

[আকবর চাচা ও রশীদ সাহেবদের পিভি থেকে রবিনের ফোনালাপ দেখা যাবে। রবিনের পিভিতে তার বাবা-মার বিরক্ত চেহারা দেখা যাবে, রশীদ সাহেবের ফোন বেজে উঠবে]

রশীদ : হ্যালো? এ বাবা মন্টু, হামেরা তো ভিতরত।

[আকবর তার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে কথা বলতে থাকবেন]

আকবর : হ্যালো মন্টু মামু? আর কন না বারে, বহুত কাউয়া-ক্যাচাল করি ভিতরত ঢুকিবা দিছে। তুই ওত্তি একনা সিস্টেম করেক। আরে হামেরা ফির বাহির আসিম ক্যামনে? ... নাহায় নাহায়... একবার ঢুকিবা দিছে বার বার দিবে নাকি?... নাহায়, রবিনেকো যাবা দিবা নাহায়। ওমার এখন বেডিং কাড আর এম্বায়-ওম্বায় কিবা কাড নিবা হোবে...
কাজল : বেডিং কার্ড না চাচা, বোর্ডিং কার্ড। আর ওইটা এম্বায়-ওম্বায় না, এম্ব্যার্কেশন কার্ড।
আকবর : এইল্লা তুই অক বুঝাই কহেক।

[সাজ্জাদ ও কামাল একই ভঙ্গিতে বসে কথা বলছে]

সাজ্জাদ : আপনি হয়ত ভাবছেন এই অদ্ভুত ধরণের স্টাডি আমি কেন করি? ...কে জানে কেন! খেয়াল বলতে পারেন, নানান রকম শখ থাকে না মানুষের?... বাদ দিন এসব। আপনাকে বরং একটা গল্প শোনাই, অবশ্য ইফ ইউ আর নট ফিলিং বোরড্‌।
কামাল : না না, বোরড হতে যাবো কেন? বেশ তো সময় কাটছে। আপনি বলুন।
সাজ্জাদ : আমার স্কুল জীবনের অনেকটাই কেটেছে গাইবান্ধা জেলায়, মহিমাগঞ্জ নামে একটা গ্রামে। সেখানে একটা চিনিকল আছে, বাবা সেখানে চাকরি করতেন। আমাদের একটা কুকুর ছিলো।
কামাল : কুকুর একটা ছেলেবেলায় আমিও পুষতাম। তা আপনার কুকুরের নাম কী ছিলো? কোন জাতের?
সাজ্জাদ : দেশী জাতের। বাবা একসঙ্গে দুটো বাচ্চা কুড়িয়ে এনেছিলেন। লালটার নাম লালু, আর কালোটা কালু হতে গিয়ে হয়ে গেল ভুলু। সেকালে লালু-ভুলু নামে একটা ছবি খুব হিট করেছিলো। যাই হোক, লালুটা একদিন কাউকে কিছু না বলে উধাও হয়ে গেল। কিন্তু ভুলু যেমন ছিলো প্রভুভক্ত, তেমনি বিশ্বস্ত। আমাদের জিএম সাহেব একবার তাকে নিয়ে গেলেন পুষবার জন্য। সেই রাতেই সে বাড়িতে এসে হাজির। গলায় একটা ছেঁড়া দড়ি। ব্যাপার কী? ব্যাপার গুরুতর। সিকিউরিটি গার্ডদের দুজনকে, জিএম সাহেবের ছেলেকে, এমনকি তাকেও ভুলু আঁচড়ে-কামড়ে একাকার করেছে। দড়িটা তার গলায় বাঁধা গেলেও অপরপ্রান্ত সে কিছুতেই খোঁটায় বাঁধতে দেয়নি।

[ইন্টারকাটে দেখা যাবে, রবিনদের দলের কাছে বেশ বড়সড় একটা জটলা তৈরি হয়েছে। আরো অন্তত জনা দশেক মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছে। এদিকে রবিনের ফ্লাইটের সময়, স্পিকারে অ্যানাউন্স করা হবে। কামাল একটু অস্থির হবে]

সাজ্জাদ : ভুলুর বীরত্বের কাহিনী থাক, আসল ঘটনায় আসি। আমরা যখন অন্য সুগার মিলে বদলি হয়ে গেলাম, তখন ভুলুকেও সঙ্গে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবা দিলেন না। মুখে বললেন নতুন জায়গায় সে অ্যাডজাস্ট করতে পারবে না। আসলে বাবার ভয় ছিলো প্রুতিবেশীরা হয়ত তীর্যক মন্তব্য করবে- “ফুটানী দেখ, কুত্তা নিয়ে এসেছে”। যাই হোক, আমরা ভুলুকে পাশের বাড়ির খোকনদের হাতে তুলে দিয়ে রওনা হলাম।

[এই অংশ থেকে ফ্লাশব্যাক দেখানো হবে। একটা ট্রাক বা পিক-আপে করে মালপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অন্য একটা মাইক্রোবাস বা রিকশায় চড়ে কিছু লোক বিদায় নিচ্ছেন। একটা ছোট বাচ্চা ক্রমাগত কাঁদছে, আর তার পাশে দাঁড়িয়ে একটা কালো রঙের কুকুর ক্রমাগত লেজ নাড়ছে। ছেলেটার সমবয়সী আরো কিছু ছেলেমেয়ে তাদের ঘিরে থাকবে। ছেলেটার বাবা হাত ধরে তাকে নিয়ে গাড়িতে তুলবেন, গাড়ি ছেড়ে দিবে। কুকুরটা পিছন পিছন যেতে থাকবে। ফ্রেম ডিজলভ্‌ড হয়ে বাস্তবে ফিরে আসবে]

কামাল : তারপর?
সাজ্জাদ : ট্রেন ছেড়ে দেবার পর আমরা ভুলুকে দেখতে পেলাম। ভুলু ছুটছে ট্রেনের পাশে পাশে...

[আবারও ফ্লাশব্যাক। দেখা যাবে পূর্বে দেখানো বাচ্চাটা ট্রেনের জানলা থেকে চিৎকার করে কাঁদছে আর বলছে-‘ফিরে যা, ভুলু ফিরে যা, ভুলু তুই আসিস না, ফিরে যা...’। বাইরে দেখা যাবে ট্রেনের পাশে পাশে ছুটছে সেই কালো রঙের কুকুরটা। বাচ্চাটা ভিষণ এক্সাইটেড, বাবা-মা তাকে ধরে রাখতে পারে না, এমন অবস্থা। সাজ্জাদের কথা শোনা যাবে ভয়েসওভার হিসেবে]

সাজ্জাদ : ভুলু তার সমস্ত প্রভুভক্তি, অন্ধ আবেগ আর এই নিদারুণ অকৃতজ্ঞ, অতি সাধারণ মানুষ ক’টার জন্যে তার অসাধারণ, অসম্ভব ভালোবাসা নিয়ে ছুটছে। আমি চিৎকার করে ভুলুকে ফেরাতে চাইলাম, ‘ভুলু ফিরে যা, ভুলু তুই ভুল করিস না, ফিরে যা’। ট্রেনের প্রবল শব্দে আমার চিৎকার চাপা পড়ে গেল, ভুলু কিছুই শুনতে পেলো না। শুনতে পেলেও মানতে পারলো না। সে ছুটতেই থাকলো। ভুলু জানতো না, যন্ত্র বড় জোরে ছোটে। আর যে মানুষেরা যন্ত্রের ভেতরে গিয়ে চড়ে বসে, তারাও হয়ে যায় যন্ত্র, নিদেনপক্ষে যান্ত্রিক! এই ভাবনাও তার মনে আসেনি, তার দৌড়ের শেষপ্রান্তে সে তার প্রভুর দেখা পাবে কিনা। একবারের জন্যেও সে ভাবেনি, আমরা তাকে যদি সানন্দে বরণই করবো, তবে ফেলে গেলাম কেন? তাই যদ্দূর দেখতে পেয়েছি, ভুলু ছুটছিলো...।

[রবিনের কানে মোবাইল, সে এখনও দলের সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন। রবিনের বাবা-মা, ভাই-বোনেরা সবাই তার সাথে কথা বলবার জন্যে আগ্রহী, রবীন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না। তাকে দেখে বরং মনে হবে, প্লেনে উঠতে কেন দেরি হচ্ছে, তাই নিয়ে সে বিরক্ত। কামালের অনুপস্থিতি রবিন যেন খেয়ালই করছে না। এদিকে আকবর চাচা বা অন্যদের মধ্যে কামালের খোঁজ পড়বে]

রশিদ : কেরে শাহেদ, কামাল কোটে?
শাহেদ : এদিকই তো ছিলো। গেছে হয়তো কোন দিকে।
আকবর : এইল্লা ফের কেরকম কাথা বারে? একটা মানুষ হামারে সাথ আসিল, হামারে সাথ থাকিল, এখন আসল টাইমে আসি তার কোন পাত্তা নাই?
শাহেদ : পাত্তা নাই তো আমি কী করবো? অর পাত্তা রাখার জন্যে মনে হয় আসছি আমি?
কাজল : এইগুলা আবার কী কথা বলিস রে? এরকম করি কেউ কয় নাকি? তোর সাথ ওর আবার কিছু হইছে নাকি?
শাহেদ : আমার সাথ আবার কী হোবে। যা হবার অর নিজের সাথে হইছে। আগেত থাকি টিকিট করি ফালাইছে, এখন বাস মিস করার টেনশনে হুশ-জ্ঞান হারায়ে ঘুরে বেড়াছে।
রবিন : কেন, বাস মিস হবে কেন? টিকিট কখনকার করছে?
শাহেদ : দশটার বাসে। তখন তো তোর ফ্লাইট লেট হবার কথা ছিলো। অয় মনে হয় এখনো জানে না, তোর ফ্লাইট ওকে হইছে।
আকবর : নাহায় বারে, ছোয়াকোনাক খুঁজি বাইর করো। কোটে গেইল বারে, খুঁজি দেখো...

[সাজ্জাদ মাথা নিচু করে বসে আছে, তার চোখ সামান্য ভেজা। কামাল খুব আলতো করে একটা হাত তার কাঁধে রাখবে]

কামাল : তারপর? ভুলুর আর কোন খোঁজ পেয়েছিলেন?
সাজ্জাদ : হ্যাঁ পেয়েছিলাম। বগুড়া থেকে ফেরার পথে খোকনের বাবা, রওশন চাচা তাকে দেখতে পান রেল লাইনের ধারে। যতক্ষণ শরীরে বল ছিলো, ভুলু ছোটা থামায়নি। বোকা ভুলুটা একনাগাড়ে ছুটে গিয়েছিলো প্রায় পঁচিশ মাইল পথ। তারপর ক্ষুধা-তৃষ্ণায়-ক্লান্তিতে বসে পড়ে, শুয়ে পড়ে চিরতরে। ...রওশন চাচা বলেছিলেন, শেষ শোয়াটাও সে শুয়েছিলো আমরা যেদিকে গিয়েছি, সেদিকেই মুখ করে।

[সাজ্জাদ বসে আছে মাথা নিচু করে। তার ঝুলে যাওয়া কাঁধে হাত রেখে বসে আছে কামাল। তাদের পিভি'তে দলটাকে দেখা যাবে, কাজল হঠাৎ কামালকে দেখতে পেয়ে জোরে ডাকতে থাকবে, কিন্তু কামাল স্থির-দৃষ্টিতে দেখতে থাকবে রবিনকে, যেন রবিন ছাড়া আশপাশে আর কেউ নেই। কামালের দেখাদেখি কাজলও তাকাবে রবিনের দিকে, রবিনের মা তাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কাঁদছেন, রবিন তাতে সীমাহীন অস্বস্তি বোধ করছে। সে এক পর্যায়ে মায়ের আলিঙ্গন-মুক্ত হবার জন্যে কিছুটা রুঢ় আচরণ করবে, এতে বাবা বা ভাই বোনেরাও অস্বস্তি বোধ করতে থাকবে। আকবর চাচা বা অন্য আত্মীয়-স্বজনরা কেউ রবিনের মনযোগ আকর্ষণ করতে পারবে না, সে ইতিমধ্যে তার সমস্ত লাগেজ ট্রলিতে উঠিয়ে প্যাসেঞ্জার্স অনলি লেখা গেটের সামনে দাঁড়িয়েছে। সে এমনকি পেছন ফিরেও তাকাচ্ছে না।

সাজ্জাদ :কী দেখছেন, কামাল সাহেব?
কামাল : [অবাক হয়ে তাকাবে, কিছু বলবে না কিংবা বলতে পারবে না]
সাজ্জাদ : আপনি এখন কী করবেন, কামাল সাহেব?... ওই যে দেখছেন, আপনার বন্ধু রবিন, ডলারের দেশে পৌঁছুনোর জন্যে কেমন উদ্গ্রীব! আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র কাজ শুরু করে দিয়েছে। যে সময় আপনাদের কাছ থেকে পালাই পালাই করছে, সেই সময়টাই রবিনের আর কাটতে চাইছেনা। কী করবেন, কামাল সাহেব? এগিয়ে যাবেন, বন্ধুকে শেষ বিদায় দিতে? আপনার বন্ধু তো মহান টাকা-পয়সার দেশের আকর্ষণে ধরিত্রী মায়ের কোল ছাড়ছেন, গর্ভধারিণীকেও ইতিমধ্যেই বিরক্তি বলে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। রবিন তো দেশের মাটি ছাড়ার আগেই মা-মাটির টানকে ভুলতে পেরেছেন, আপনি কেন এখনও দ্বিধা কাটাতে পারছেন না? '...আমার কুকুর ভুলু, মানুষের সাথে থেকে থেকে আনুগত্য, বিশ্বস্ততা আর প্রভুভক্তি শিখেছিলো; বিষয়বুদ্ধি, স্বার্থজ্ঞান আর রূঢ় বাস্তবতা শিখতে পারে নি। পশুবত আচরণ পশুরাও ততটা পারেনা, যত দ্রুত শিখে যায় মানুষ! কী করবেন? ভুলুর মতো হত্যে দিয়ে ছুটবেন রবিনের পিছে পিছে? পারবেন না। ঐ রানওয়েটা অনেক বড়, অনেক লম্বা। ঐখানে ছুটতে গেলে বাতাসকেও হার মানাতে হয়, তবেই সেটা পার হওয়া যায়। নয়তো মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবেন, কেউ ফিরেও তাকাবে না। ভুলু বোকা ছিলো, সস্তা আবেগ দমন করতে পারেনি। আপনি কী করবেন, কামাল সাহেব?

[কামাল খুব ধীরে মাথা তুলে তাকাবে সাজ্জাদের দিকে, সেখান থেকে একবার ফিরে তাকাবে রবিনের দিকে, তার চোখে শূণ্য দৃষ্টি। সে কাউকে চিনতে পারবে বলে মনে হবে না। থমথমে চেহারায় সে উঠে দাঁড়াবে, তারপর ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে গেটের দিকে যেতে থাকবে। সবাই অবাক হয়ে তার আচরণ লক্ষ্য করবে, আরো জোরে তাকে ডাকতে থাকবে। কিন্তু সে কোন ভ্রুক্ষেপ না করে বেরিয়ে যাবে, নাটক শেষ হয়ে যাবে]



সমাপ্ত

1 টি মন্তব্য:

  1. অযুহাত (কিংবা কানা-খোঁড়া অযুহাত): দৃশ্যান্তরগুলো খুব নিশ্চিতভাবে উল্লেখ করা হয়নি। আসলে পুরো নাটকটাই একটা জায়গার মধ্যেই এবং একই কন্টিনিউটি'র মধ্যে চলমান বলে, আলাদা করে দৃশ্যান্তর দেখানো একটু ঝামেলার কাজ (অবশ্য আমি কাহিনীকার হিসেবে এই ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চাইলেও চিত্রনাট্যকার হিসেবে এড়ানোর কোনও সুযোগ নেই!)
    -নাট্যকার

    উত্তরমুছুন