শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০০৯

যখন বেলা শেষের ছায়ায়...

লোকটা অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে। ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে সবচে’ আগে ধরতে পারলো রবিন। রবিন বরাবরই একটু বেশি চালু। সে কারণেই আমাদের রেখে আমেরিকা চলে যেতে পারছে। যেতে পারছে কথাটার আগে ‘চলে’ শব্দটা বসালাম এ জন্যে যে, রবিন সেখানে বেড়াতে যাচ্ছে না, ডিভি জিতে পাকাপাকিভাবে থাকতে যাচ্ছে। আর আমরা, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাই ভীঁড় করে এয়ারপোর্টে এসেছি তাকে বিদায় জানাতে। বৃটিশ এয়ারওয়েজের যে বিমানে তার চেপে বসার কথা, সেটার কলকব্জায় সম্ভবত কোন গোলমাল ঘটেছে। উড়তে দেরি হবে। রবিনের বাবা-মা তাতে মহা খুশি। আরও কিছু সময় ছেলেকে বেশি পাওয়া যাচ্ছে কাছে। আত্মীয়-স্বজনরাও খুশি। রবিন কতটা খুশি তা অবশ্য তার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে না, সে বরাবর তার মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত, অভিব্যক্তি প্রকাশের তার সময় কই! মাঝখান থেকে আমি পড়ে গেলাম মাইনকা চিপায়। সাড়ে চারটার ফ্লাইট যদি চার ঘন্টা লেট করে, তাহলে হলো গিয়ে সাড়ে আট। তারপর এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে হতে যাবে আরো অন্তত আধাঘন্টা। মানে দাঁড়ালো নয়টা। এখান থেকে গাবতলী যেতে কতক্ষণ লাগবে, তা একমাত্র বিধাতা জানেন। সাড়ে দশটার মধ্যে পৌঁছুতে যদি না পারি? বাস মিস করে রাতে থেকে যাওয়া তো দূরে থাকুক, আরেকবার টিকিট করাও কি সম্ভব? কেন যে শালার আগাম টিকিট করতে গেলাম! বুকিং দিয়ে রাখলেই তো হতো।
কিছু করার নেই তাই কথা বলা। কথা বলে সময় কাটানো। শাহেদ বললো, ‘দোস্ত, তোমার কপাল ভালো, শুরুতেই ক্যালিফোর্নিয়া’র মতো শহরে থাকতে পারতেছো। ডিভি জিতে যারা আমেরিকা যায়, তাদেরকে বলে ফাস্টে টেক্সাস, ক্যানসাস এইসব বিরান জাগায় পাঠায়ে দেয়’।
আমার ভুরু কুঁচকে গেল। সবখানে এরকম পণ্ডিত পণ্ডিত ভাব নেবার তো দরকার নাই। শাহেদের পণ্ডিতির একটা সমুচিত জবাব দেয়া খুবই জরুরি বিবেচনায় আমি প্রশ্ন করলাম, ‘টেক্সাস, ক্যানসাস এইগুলা
বিরান জাগা তোরে কে কইলো?’
‘কেউ কয় নাই, এমনিই কইলাম।’
‘এমনি এমনিই একটা কথা কয়ে ফেললি?’
‘কইলে তোর অসুবিধা কি? তাছাড়া আমি ইংলিশ ছবিতে দেখ্ছি। তুই দেখিস নাই? ওয়েস্টার্ন গল্পে পড়িস নাই?’
‘ছবিতে দেখলে, গল্পে পড়লেই সবকিছু জেনে ফেললি? ছবিতে সিনেমায় সবকিছু সত্যি থাকে নাকি?’
শাহেদ তেড়ে ফুঁড়ে উঠে কিছু একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিলো। শাহেদ আর আমার মধ্যে কেবল একটা বিষয়েই মিল, তা হলো- আমরা দু’জনেই তর্কে ভীষণ পারঙ্গম। এবং আমরা সেটা যদ্দূর সম্ভব এনজয় করি। সুতরাং অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবার আগেই কাজল প্রসঙ্গ পাল্টালো, ‘তোর ভাগ্যটা আসলেই ভালো। শুরু থেকেই তোর নামটা ইংরেজী ধরণের। নয়ত বিদেশীরা তো আবার বাংলা নামগুলা উচ্চারণই করতে পারে না। কেন পড়িস নাই, হুমায়ূন আহমেদ'কে উচ্চারণ করে হিউমাউন আহামাড। আমরা সবাই হেসে উঠলাম, শাহেদ ছাড়া। হুমায়ূন আহমেদ কি বাংলা শব্দ? - শাহেদের প্রশ্ন করবার ধরণটাই বলে দিচ্ছে, একটু আগে আমার সাথে তর্কটা জমাতে না পারার একটা আক্ষেপ এর মধ্যে লুকানো আছে। সুতরাং সবাই আবারও হেসে উঠলো।
রবিনের আব্বা সোবহান চাচা, ছেলেকে একধার থেকে বুঝিয়ে যাচ্ছেন, আমেরিকায় থেকেও কী উপায়ে সে তার বাঙালীত্বকে, বিশেষত মুসলিমত্বকে অক্ষুন্ন রাখতে পারবে। সর্বোপরি এটা কখনই ভুললে চলবে না যে, ছোট তিন ভাই বোনকে নিয়ে বুড়ো বাবা-মা দেশে একেবারে বেসাহারা হয়ে থাকবেন, কোনমতেই ডলার পাঠাতে যেন দেরি না হয়। আকবর চাচা রবিনদের নিকটতম প্রতিবেশী, ফেয়ারওয়েল টিমের তিনি সবচে’ উজ্জ্বল নক্ষত্র। এমন একটা বিষয়ও নাই, যাতে তার জ্ঞানে কিঞ্চিত ঘাটতি আবিস্কার করা যেতে পারে। রবিনের বিমান প্রথম গিয়ে নামবে নিউইয়র্কে, তারপর সেখান থেকে তাকে যেতে হবে ক্যালিফোর্নিয়ায়। নিউইয়র্ক থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার প্লেনটা কীভাবে ঠিকঠাক মতো খুঁজে বের করতে হবে, কোনো কারণে সেটা মিস্ হয়ে গেলে কী ব্যবস্থা নেয়া যাবে, সে দেশের পুলিশ কতখানি সহযোগিতা-পরায়ণ, বিমানে ছাড়াও কীভাবে বাসে চড়ে যাওয়া যাবে, বাসের সিট আমাদের দেশের বাসের তুলনায় কতটা পুরু, কত আরামদায়ক, রাস্তা কতটা সমান... এইসব এমন মুন্সীয়ানায় ব্যাখ্যা করে যাচ্ছেন, শুনে মনে হওয়া স্বাভাবিক, নিকট অতীতে তিনি এই দুই শহরের মাঝে তাঁতের মাক্কুর মতো আপ-ডাউন করেছেন। অথচ বিমানে চড়া তো দূরে থাকুক, সবাই জানে, দিনাজপুর থেকে ঢাকা ছাড়িয়ে চট্টগ্রাম-সিলেট যাওয়ার অভিজ্ঞতাও তার নেই।
যেহেতু আমি দিনাজপুর ফিরবার বাসটা মিস্ হয়ে যাবে কিনা- এই আশংকায় অতিশয় উদ্বিগ্ন, সুতরাং শাহেদও এতক্ষণ বিমর্ষ বোধ করছিলো। তার তর্ক করার সঙ্গী নেই! ফলে সে যে এবার আকবর চাচাকে তার কাউন্টার-পার্ট হিসেবে নিতে চাইবে, তাতে আর দোষের কী? এত উদ্বেগের মধ্যেও তাদের অযথা তর্ক দেখে আমার বরং হাসিই পাচ্ছিলো। ঠিক এই সময় রবিন লক্ষ্য করলো, একটা মানুষ আমাদের লক্ষ্য করছে, এবং সেটা অনেকক্ষণ ধরে। সে নাকি দীর্ঘ সময় ধরে একই জায়গায় বসে আছে এবং ঘুরে ফিরে আমাদেরকেই লক্ষ্য করে যাচ্ছে। ব্যাপারটা কী? আমরা আমাদের অনুমান ক্ষমতাকে নিমেষেই চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেলাম। ছিনতাইকারী নয়তো? 'এয়ারপোর্টে ফিল্মী কায়দায় ছিনতাই, দুবাই ফেরত অথবা সৌদিগামী যাত্রীর সর্বস্ব লুট...' এ জাতীয় খবর আজকাল প্রায়ই কাগজে আসে। এই লোক সেই ধরণের কেউ নয়তো? খুব কায়দা করে আমিও দেখলাম লোকটাকে। আকাশী রঙের স্ট্রাইপ শার্ট, কালো প্যান্ট। শার্টের হাতা কব্জির একটু ওপর পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা। ডান কব্জিতে কালো ঘড়ি, ফর্সা হাতে সুন্দর লাগছে। চোখে চশমা থাকলে আরো ভালো লাগতো মনে হয়, কিন্তু নেই। ঠোটের নিচে ছোট্ট দাড়ি আছে, বেশ আধুনিক কেতার। দেখে আর যা’ই হোক, ছিনতাইকারী বলে মনে হয় না। অবশ্য এমনও হতে পারে এয়ারপোর্টের মতো ভদ্র এলাকার ছিনতাইকারীরা দেখতে এরকম ভদ্রলোকই হয়। ...আমরা এইরকম আরো কিছুক্ষণ আলোচনা করে, আরো নতুন কিছু আবিস্কারের চেষ্টা করে একসময় হাল ছেড়ে দিলাম। আবারও যে যার মতো গল্পে মশগুল হয়ে গেলাম। শাহেদ আর আমি নতুন করে তর্ক করবার উপলক্ষ খুঁজতে লাগলাম, রবিনের ছোট ভাই-বোনগুলো একটার পর একটা আবদার মনে করিয়ে দিতে থাকলো, রবিনের আম্মা, যিনি কিনা সুযোগ পেলেই কান্নাকাটি করে মন হালকা করছেন, তিনি আবারও মন হালকা করবার সুযোগ খুঁজতে লাগলেন, সোবহান চাচা উপদেশের আড়ালে তাঁর দাবী-দাওয়াসমুহ মুহুর্মুহু স্মরণ করিয়ে দিতে থাকলেন আর আকবর চাচা তাঁর বিশেষজ্ঞ মতামত পূর্ণোদ্যমে পেশ করতে থাকলেন। একটা মানুষ যে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে এবং আমাদেরকে লক্ষ্য করছে, এটা আমরা কেউই মনে
রাখবার প্রয়োজন বোধ করলাম না।
আকবর চাচার কান্ডজ্ঞান বরাবরই ঘাটতির দিকে। বাবা-মা’র সামনেই তিনি রবিনকে উপদেশ দিচ্ছেন,
‘একটা কাথা সবসময় খেয়াল করি থাকিবু বাবা। আমরিকাত দুইটা জিনিস হইলো ফিরি। এক নম্বর- মোদ, আর দুই নম্বর হইলো বেটি ছোয়া। দোনোটাই কিন্তুক ডেনজোরাস্। ধইছেন কি মইছেন! ধলা চামড়ার মাগি দেখি পাগেলা হই যান না বারে। ঐ দ্যাশের তামাল্লার এইডোস ধইছে, এইটা খেয়াল রাখিবা হোবে। এইবার যা হোউক, টপ্পাস করি ডাক পইছে, চলি যাছেন, যান। কিন্তুক ছয় মাসের মইধে দ্যাশত ফিরি বেহা করি বউ নি যাইয়ো। তখন আর চিন্তা ভাবনা থাকিবে নাহায়। আর যেহেতু শীতের দ্যাশ, শরীল গরম রাখিবা তনে মোদ খাবা হোবে, কম কম করি খাবেন। ঐল্লা দ্যাশত অল্প করি মোদ খাওয়াটাও ফ্যাশন। কিন্তুক নেশা করিবা তনে মোদ ধইছেন তো মইছেন!’
এইসব কথা শুনে খালাম্মা নতুন করে মন হালকা করবার সুযোগ পেয়ে গেলেন, আর আমার পেয়ে গেল বাথরুম। আমি কাউকে কিছু না বলে একপাশে সরে আসলাম এবং একসময় নারী ও পুরুষের ছবি আঁকা পৃথক বাথরুমগুলো খুঁজে বের করে ফেললাম। বাথরুমের দরোজায় লেখা- রেস্টরুম। কী আশ্চর্য, রেস্ট নিবে লোকে বেডরুমে নয়ত ড্রয়িংরুমে, বাথরুম কী করে রেস্ট নেবার স্থান হয়?... এ জাতীয় হাস্যকর বিষয় নিয়ে উল্টোপাল্টা ভাবছি, হঠাত ঠিক পাশ থেকে ‘কেমন আছেন’ শুনে একদম চমকে গেলাম। তাকিয়ে দেখি, সেই ভদ্রলোক। ভদ্রলোকের ভদ্রতা এরকম হয়? আরেকটু হলেই তো...। আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, লোকটা তার আগেই হড়বড় করে একগাদা কথা বলে ফেললো,
‘ফ্লাইট যতটা লেট হবার কথা ছিলো, ততটা হবে না। আর বড় জোর ঘন্টা খানেক। অবশ্য কনফার্ম হতে আরো মিনিট দশেক লাগবে, তারপরই অফিসিয়াল ঘোষনা আসবে।’
আমি ভীষণ অবাক হলাম,
‘আপনি জানলেন কী করে? তাছাড়া, আমরা যে ঐ ফ্লাইটেরই অপেক্ষাতে আছি, সেটাই বা কে বললো?’
‘প্রথমটা জানলাম অফিসিয়াল সূত্রে। আমার বন্ধু ইমিগ্রেশনে আছে। তাছাড়া আমি তো প্রায়ই এয়ারপোর্টে এসে বসে থাকি। অনেকের সাথেই বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। সুতরাং এটুকু খবর বের করা কোন ব্যাপারই না। আর দ্বিতীয়টা বলেছেন আপনিই।’
‘আমি?’ আমি আকাশ থেকে পড়লাম।
‘নিশ্চয়ই। তবে আমাকে নয়, আপনার বন্ধু শাহেদকে।’
‘আমার বন্ধুর নাম...’
‘সেটাও আপনার কথা থেকেই জেনেছি। বাস মিস্ করবার টেনশনে আপনি এতটাই উদ্বিগ্ন ছিলেন, আমাকে খেয়ালই করেন নি। আমি আপনাদের ঠিক পেছনেই বসে ছিলাম। আপনার নামটা অবশ্য জানি না, কারণ আপনার বন্ধু সেটা উচ্চারণ করেন নি।’
‘কামাল।’ আমি অন্যমনস্ক হয়ে নামটা বলে ফেললাম।
‘সাজ্জাদ’
‘জ্বি?’
‘আমার নাম।’ সাজ্জাদ হাসলো। সহজ সরল নির্মল হাসি। ‘বাই দ্য ওয়ে, আপনার বাস মিস করার টেনশন তো কমিয়ে দিলাম, বলুন কী খাওয়াবেন?’
এমনভাবে বলছে যেন সে নিজেই প্লেনটা সারিয়ে এসেছে। আমি কিছু একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিলাম, সাজ্জাদ এবার জোরে হেসে উঠলো,
‘ডোন্ট টেক ইট সিরিয়াসলি, জাস্ট কিডিং, হা হা হা...। চলুন, কোথাও গিয়ে বসি।’
আমি ব্যাপক সিদ্ধান্তহীনতায় পড়লাম। একটু আগে এই লোকটার ছিনতাইকারী হবার পেছনে আমরা যথেষ্ট যুক্তি দেখতে পেয়েছি। লোকটা নিজেও বললো, প্রায়ই নাকি এয়ারপোর্টে আসে, এসে বসে থাকে। কেন? মক্কেলের খোঁজে?... কিন্তু এর সাথে না গিয়েই বা করবো কী? সেই তো ঘুরে ফিরে একই কেত্তন, আকবর চাচার হামবড়া লেকচার, খালাম্মার ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না, সোবহান চাচার নির্লজ্জ দাবী-দাওয়া, আমার আর শাহেদের অনর্থক তর্ক... সব মিলিয়ে উদ্ভট একটা অবস্থা। ইতিমধ্যেই রবিনের অন্য সব আত্মীয়রাও আসতে শুরু করেছে এবং কোন এক বিচিত্র কারণে তাদের প্রায় কেউই আমাদের তিন বন্ধুর বিদায় দিতে আসাটাকে সহজভাবে নিতে পারছে না। সুতরাং দলের কাছ থেকে দূরে থাকাটাই বরং ভালো।
তাছাড়া এ যদি ছিনতাইকারী হয়ও, তো আমার ভয়ের কী? আমার কাছে আছেই কী যে ছিনতাই করবে? ফেরত যাবার ভাড়াটাই জুটাতে পারছি না! তাও তো কপাল যে ফ্লাইট যতটা আশঙ্কা করেছিলাম, ততটা লেট করবে না। নইলে যে কী হত! আশ্চর্য ব্যাপার, রবিনের ফ্লাইট যতই কাছিয়ে আসছে, ততই আমার মনে হতে থাকছে, বিদায়টা কি দিনাজপুরে থেকেই দেয়া যেত না? আবেগের বসে এতটা না করলেও পারতাম!
সাজ্জাদ লোকটা কি মনের কথা বুঝতে পারে? আমি যা ভাবছিলাম, সে ঠিক সেই প্রশ্নটাই করে বসলো কী করে? আমি স্মার্ট হবার চেষ্টা করলাম,
‘দেখুন, রবিন আমার সবচে’ প্রিয় বন্ধু। সে আমেরিকায় বেড়াতে যাচ্ছে না, চিরতরে চলে যাচ্ছে। আর কবে দেখা হবে, কে জানে। সে চলে যাচ্ছে, আমি তাকে বিদায় দেব না?’
‘কেন নয়, নিশ্চয়ই দেবেন। আমার প্রশ্ন আসলে এটা নয়। আমি জানতে চাচ্ছিলাম, বিদায়টা কি দিনাজপুরে থেকেই দেয়া যেত না? দিনাজপুর রেল স্টেশনে কি বাস টার্মিনালে, কিংবা ধরুন আপনার নয়ত রবিন সাহেবের বাসাতেই?’
‘আমার বন্ধু আমেরিকা চলে যাচ্ছে, আর আমি তাকে বিদায় জানাতে ঢাকা পর্যন্ত আসবো না?’
‘আসবেন বৈকি, এসেই তো গেছেন। কিন্তু সেটা কতটা যৌক্তিক, তা কি ভেবে দেখেছেন? ...তুমি চলে যাচ্ছো, আর দেখা হবে না -এটা কি ঘরে বসেই মেনে নেয়া যেত না? তবু আমরা আমাদের সীমিত সঞ্চয় ব্যয় করে পেছন পেছন ছুটে যাই, যদ্দূর যেতে পারি আরকি। তারপর একসময় ডান হাতের কব্জিটা ডানে বামে হেলিয়ে দুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিরে যাই। ...বিদায়ীর সঙ্গী হবার এই যে অভিনয়, কতটা দরকার এর?’
‘আপনি এটাকে অভিনয় বলছেন কেন? আবেগের কি কোনই মূল্য নেই!’
‘নিশ্চয়ই আছে। প্রশ্নটা আবেগ নিয়ে নয়, আবেগ প্রকাশের ধরণ নিয়ে। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি, আপনি আপনার বন্ধুর সাথে ঢাকা পর্যন্ত এলেন, বাকিটুকু যাচ্ছেন না কেন?’
‘কী অদ্ভুত কথা। রবিনের কাছে আমেরিকা যাবার টিকিট আছে, ভিসা আছে। আমার তো পাসপোর্টই নাই, আমি কী করে যাবো?’
‘অর্থাত বাকিটা যাবার সামর্থ থাকলে যেতেন?’
‘তা কেন? রবিন যাচ্ছে তার নিজের কাজে, সে সেখানে থাকতে যাচ্ছে। আমি তার সাথে গিয়ে কী করবো?’
‘স্ট্রেঞ্জ! আচ্ছা ধরুন রবিনের ফ্লাইট আজ রাত দশটার আগে ছাড়বে না। আপনি কী করবেন? টিকেট ক্যানসেল করে থেকে যাবেন?’
আমি এবার সত্যিকার বেকায়দায় পড়লাম।
‘দেখুন, আপনি তো জেনেই গেছেন, আমার পক্ষে থেকে যাওয়াটা সম্ভব নয়, আমি সে রকম প্রিপারেশন নিয়ে আসিনি। ...কিন্তু সবার ক্ষেত্রে তো তা নয়। যেমন ধরেন কাজল, সে তো থেকে যেতে পারে। ইন ফ্যাক্ট সে থাকবেও। দুই দিন পরে যাবে।’
‘কিন্তু রবিন তো আজই চলে যাচ্ছে, তাহলে কাজল কেন আরো দু’দিন পরে যাবে? ...অর্থাত, সে এসেছিলো নিজের কাজে, এই সুযোগে বন্ধুকে সি-অফ করলো, তাই তো? দ্যাটস্ ইন্টেলিজেন্ট!’
‘তার মানে বলতে চাচ্ছেন আমার আসাটা বোকামী হয়েছে?’
‘আমি কিছু বলতে না চাইলেও, সত্যি কিন্তু এটাই!’
আমি নিদারুণ অপ্রস্তুত হলাম। এবং যেহেতু আমার ব্যক্তিত্বের মধ্যে বোকা বোকা ধরণটা বেশ প্রবলভাবেই বর্তমান, সুতরাং অপ্রস্তুত ভাবটা গোপন করতে পারলাম না। সাজ্জাদ সেটা বুঝতে পারলো। তাই কথা ঘোরানোর জন্য বললো,
‘আপনাকে শুরুর দিকে বলেছিলাম, আমি প্রায়ই এয়ারপোর্টে আসি। কেন আসি, তা কি জানেন?’
আমার মুখে প্রায় এসে গেছিলো, ‘মক্কেলের খোঁজে!’ শেষ মুহূর্তে সামলে নিলাম। সাজ্জাদ নিজে থেকেই বললো,
‘মানুষ দেখতে। প্রতিদিন নানান মানুষ নানান দেশ থেকে আসছে, যাচ্ছে। তাদের বিদায় দিতে, কিংবা ঘরে ফিরিয়ে নিতে আসছে কত মানুষ। কেউ আসছে প্রাণের টানে, কেউ কর্তব্যবোধ থেকে, কেউ অযথাই... কেন? কেন এত ব্যাকুলতা! কী তাদের সম্পর্ক? কিসের এত ব্যাগ্রতা? ...আমি বসে বসে দেখি আর অনুভব-আবিস্কারের চেষ্টা করি, যাত্রী আর তার সঙ্গীদের মধ্যে সম্পর্কটা কী? সেটা কতটা গভীর? ...নাকি শুধুই ফর্মালিটি!’
আমি কিছুতেই এই অদ্ভুত মানুষটাকে মেলাতে পারছি না। মানুষের বিদায় দৃশ্য থেকে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক আবিস্কার করে এর লাভটা কী? সাজ্জাদ বরাবরের মতোই বুঝে ফেললো, আমি কী ভাবছি।
‘আপনি হয়তো ভাবছেন এই অদ্ভুত ধরনের স্টাডি আমি কেন করি? ...কে জানে কেন। খেয়াল বলতে পারেন, মানুষের নানান রকম খেয়াল থাকে না?... বাদ দিন এসব। আপনাকে একটা গল্প শোনাই। অবশ্য ইফ ইউ ডোন্ট ফিল বোরড্।’
‘না না, তা কেন? বেশ তো সময় কাটছে। আপনি বলুন।’
‘আমার স্কুল জীবনটা কেটেছে গাইবান্ধা জেলার একটা গ্রামাঞ্চলে, মহিমাগঞ্জ নামের একটা জায়গায়। সেখানে একটা চিনিকল আছে, আমার বাবা সেই চিনিকলে চাকরি করতেন। আমাদের একটা কুকুর ছিলো। গল্পটা সেই কুকুরকে নিয়েই...’
‘কুকুর একটা ছেলেবেলায় আমিও পুষতাম। তা আপনার কুকুরের নাম কী ছিলো? কোন জাতের?’
‘দেশি কুকুর। বাবা এক সাথে দুটো বাচ্চা কুড়িয়ে এনেছিলেন। লালটার নাম লালু, আর কালোটা কালু হতে গিয়ে হয়ে গেল ভুলু। সে সময় লালুভুলু নামে একটা ছবি খুব হিট করেছিলো। যাই হোক, লালুটা একদিন কাউকে কিছু না বলে উধাও হয়ে গেল। কিন্তু ভুলু যেমন ছিলো প্রভুভক্ত, তেমনি বিশ্বস্ত। আমাদের জিএম সাহেব একবার তাকে নিয়ে গেলেন পুষবার জন্য। সেই রাতেই সে বাড়িতে এসে হাজির। গলায় একটা ছেঁড়া দড়ি। ব্যাপার কী? ব্যাপার গুরুতর। সিকিউরিটি গার্ডদের দুজনকে, জিএম সাহেবের ছেলেকে এমনকি স্বয়ং তাকেও ভুলু আঁচড়ে কামড়ে একাকার করেছে। দড়িটা তার গলায় বাঁধা গেলেও অন্য প্রান্ত সে কিছুতেই খোঁটায় বাঁধতে দেয়নি।
সাজ্জাদ দম নেবার জন্য থামতেই আমি দ্রুত চোখ বুলিয়ে দেখে নিলাম, রবিন তার লাগেজ টানা হেঁচড়া করছে। ইতিমধ্যে দেশের আনাচে কানাচে তাদের যত আত্মীয়-স্বজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো, সবাই মনে হয় এসে গেছে। আমি একটা মানুষ দূরে আছি, বা আমাকে দেখা যাচ্ছে না -এটা নিয়ে কেউই মনে হয় ভাবিত নয়। আমার অন্যমনস্কতা সাজ্জাদের চোখ এড়ালো না। সে আবার শুরু করলো,
‘ভুলুর বীরত্বের কাহিনী থাক, আসল গল্পে আসি। আমরা যখন অন্য চিনিকলে ট্রান্সফার হয়ে গেলাম, তখন ভুলুকেও সাথে নিতে চেয়েছিলাম। বাবা দিলেন না। নতুন জায়গায় হয়তো সে অ্যাডজাস্ট করতে পারবে না। আসলে, 'ফুটানী দেখ, কুকুর বয়ে নিয়ে এসেছে'- প্রতিবেশীদের এই জাতীয় তীর্যক মন্তব্যকেই বাবার ভয় ছিলো বেশি। সুতরাং আমরা ভুলুকে পাশের বাড়ির খোকনদের হতে তুলে দিয়ে রওনা হলাম। বন্ধুরা দল বেঁধে বিদায় দিতে এসেছিলো, আমাদের বিদায় দিতে গিয়ে তারাও খুব কাঁদছিলো, যদিও সবাই জানতো, আমাদের কান্নাটা তাদের চেয়ে বরং ভুলুর জন্যই বেশি ছিলো।
‘ট্রেন ছেড়ে দেবার পর আমরা ভুলুকে দেখতে পেলাম। ভুলু ছুটছে ট্রেনের পাশে পাশে। ভুলু তার সমস্ত বিশ্বস্ততা, প্রভুভক্তি, অন্ধ আবেগ আর এই নিদারুণ অকৃতজ্ঞ, অতি সাধারণ, তুচ্ছ মানুষ ক’টার জন্য তার অসাধারণ, অসম্ভব ভালোবাসা নিয়ে ছুটছে। আমরা চিত্কার করে ভুলুকে ফেরাতে চাইলাম, ভুলু ফিরে যা। ভুলু তুই ভুল করিস না, ফিরে যা। ট্রেনের প্রবল শব্দে আমাদের চিত্কার চাপা পড়ে গেল, ভুলু কিছুই শুনতে পেল না। শুনতে পেলেও মানতে পারলো না। সে ছুটতেই থাকলো।...
‘ভুলু জানতো না, যন্ত্র বড় জোরে ছোটে। আর যে মানুষরা তার ভেতরে গিয়ে চড়ে বসে, তারাও যন্ত্র হয়ে যায়, সীমাহীন যান্ত্রিকতাকে ভালোবেসে যন্ত্রজীবনই বরণ করে নেয়! ...এই ভাবনাও তার মনে জাগেনি, দৌড়ের শেষ প্রান্তে গিয়ে সে তার প্রভুর দেখা পাবে কিনা। একবারের জন্যেও সে ভাবেনি, আমরা তাকে যদি সানন্দে বরণই করবো, তবে ফেলে গেলাম কেন? তাই যদ্দূর দেখতে পেয়েছি, ভুলু ছুটছিলো...।’
রবিন মনে হয় এতক্ষণে তার কাগজপত্র ঠিকঠাক করে নেবার জন্য ডাক পেয়েছে। সে বারবার এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে। হয়ত মনে মনে আমাকেই খুঁজছে, কিংবা অন্য কাউকে, অন্য কিছু। আমি সাজ্জাদকে প্রশ্ন করলাম,
‘তারপর? ভুলুর আর কোন খোঁজ পেয়েছিলেন?’
সাজ্জাদ খুব হতাশ, ফ্যাকাশে গলায় উত্তর দিলো,
‘হ্যাঁ, পেয়েছিলাম। বগুড়া থেকে ফেরার পথে খোকনের আব্বা রওশন চাচা তাকে দেখতে পেয়েছিলেন, রেল লাইনের পাশে। যতক্ষণ শরীরে বল ছিলো, ভুলু ছোটা থামায়নি। বোকা ভুলুটা এক নাগাড়ে ছুটে গিয়েছিলো প্রায় পঁচিশ মাইল। তারপর এক সময় ক্ষুধা-তৃষ্ণায়-ক্লাণ্তিতে বসে পড়ে, শুয়ে পড়ে চিরতরে। ...রওশন চাচা বলেছিলেন, শেষ শোয়াটাও সে শুয়েছিলো আমরা যেদিকে গিয়েছি, সেই দিকেই মুখ করে...।’
আমি দেখলাম রবিন তার লটবহর নিয়ে 'প্যাসেঞ্জার্স অনলি' লেখা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে ঢোকার জন্য, কিংবা আমেরিকা নামক টাকাপয়সার দেশের উদ্দেশ্যে পা বাড়ানোর জন্য অপেক্ষা করছে। রবিনের সকল পর্যায়ের সমস্ত আত্মীয়-স্বজন তাকে ঘিরে আছে। যেকোনও সময় সে চলে যাবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে- এই পরিস্থিতিতে যেটা খুবই স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া যায়, রবিন আরো একটু বেশি মনযোগ দেবে তার স্বজন-বন্ধু-পরিজনদের প্রতি, এমনটাই সবাই আশা করে আছে। কিন্তু রবিনের মনযোগ অন্য দিকে। সে তার কানের সাথে লেপ্টে থাকা মোবাইলের প্রতি এতটাই মনযোগী, যেন যন্ত্রটায় সে কেবল কথাই শুনছে না, বক্তাকে চোখের সামনে দেখতেও পাচ্ছে। এই সময় আরো একবার খড়খড় শব্দে লাউড স্পিকারে কিছু একটা বলা হতেই রবিন খুব ব্যস্ততার সাথে গেটের ভেতরে ঢোকার তোড়জোড় করতে গেল আর অমনি খালাম্মা, মানে রবিনের মা তার ওপর প্রায় হামলে পড়লো। আমারও চোখ ভিজে গেল আবেগপূর্ণ দৃশ্যটি দেখে। আর ঠিক তখনই একটা বিষ্ময়কর ব্যাপার ঘটলো। রবিন প্রায় রূঢ়ভাবে, একরকম ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো তার গায়ের সাথে লেপ্টে থাকা মায়ের শরীরটাকে!
আমি হতবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম রবিন কিছু একটা বলছে তার মা’কে, যেটা শুনে খালাম্মাসহ উপস্থিত অন্য প্রায় সকলেই যথেষ্ট পরিমাণ বিব্রত হচ্ছেন, তা এতদূর থেকেও বোঝা যায়। কাজল আর শাহেদ এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে বার বার, বুঝতে পারছি আমারই খোঁজ করছে তারা, আমার তবু উঠতে ইচ্ছা করলো না। আমার এমনকি সেদিকে আর তাকাতেও ইচ্ছা করলো না। আমার বন্ধু রবিন চিরতরে চলে যাচ্ছে, আমি আমার সীমিত সঞ্চয় ব্যয় করে তাকে বিদায় দিতে এসেছি এবং এখন অন্তিম মুহূর্তে বসে আছি, কিছুক্ষণ আগে পরিচিত হওয়া সাজ্জাদের পাশে, ঘন্টাখানেক আগেও আমার এবং আমাদের অনুমানে যার পরিচয় ছিলো একজন ধুরন্ধর ছিনতাইকারী হিসেবে। যে বন্ধুর সাথে আর কোনদিনই হয়তো দেখা হবে না, সেই রবিনের বিদায়-দৃশ্য উপেক্ষা করে আমি বসে থাকলাম সাজ্জাদের গভীর দুঃখে ঝুলে পড়া কাঁধের দিকে তাকিয়ে। আর ঠিক তখনই অমোঘ নিয়তির মতো ধ্বনিত হলো সাজ্জাদের কণ্ঠ,
‘তো কামাল সাহেব, এবার আপনি কী করবেন?’
আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। আমার বিষ্মিত দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সাজ্জাদ বলে চললো,
‘আপনি এখন কী করবেন, কামাল সাহেব?... ওই যে দেখছেন, আপনার বন্ধু রবিন, ডলারের দেশে পৌঁছুনোর জন্যে কেমন উদ্গ্রীব! আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র কাজ শুরু করে দিয়েছে। যে সময় আপনাদের কাছ থেকে পালাই পালাই করছে, সেই সময়টাই রবিনের আর কাটতে চাইছেনা। কী করবেন, কামাল সাহেব? এগিয়ে যাবেন, বন্ধুকে শেষ বিদায় দিতে? আপনার বন্ধু তো মহান টাকা-পয়সার দেশের আকর্ষণে ধরিত্রী মায়ের কোল ছাড়ছেন, গর্ভধারিণীকেও ইতিমধ্যেই বিরক্তি বলে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। রবিন তো দেশের মাটি ছাড়ার আগেই মা-মাটির টানকে ভুলতে পেরেছেন, আপনি কেন এখনও দ্বিধা কাটাতে পারছেন না? '...আমার কুকুর ভুলু, মানুষের সাথে থেকে থেকে আনুগত্য, বিশ্বস্ততা আর প্রভুভক্তি শিখেছিলো; বিষয়বুদ্ধি, স্বার্থজ্ঞান আর রূঢ় বাস্তবতা শিখতে পারে নি। পশুবত আচরণ পশুরাও ততটা পারেনা, যত দ্রুত শিখে যায় মানুষ! কী করবেন? ভুলুর মতো হত্যে দিয়ে পড়ে থাকবেন বন্ধুর গমণপথের দিকে...?’
কথা শেষ করে আচমকা উঠে দাঁড়ালো সাজ্জাদ। এক ঘন্টারও বেশি সময় কথা বলার পরও সাজ্জাদকে আমার খুব অচেনা মনে হলো। যেন পরিচয়ের আগেও সে এতটা অচেনা ছিলো না। আমি দেখলাম সাজ্জাদ হেঁটে চলে যাচ্ছে ‘বহির্গমন’ লেখা রয়েছে এমন দরজাগুলোর দিকে। ঘাড় ফিরিয়ে আমি দেখলাম রবিন এতক্ষণে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে, কাঁচ ঘেরা ঘরের ভেতরে তার ধূষর স্যুটের আভাস। আর সে ঘরের প্রবেশ পথের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন রবিনের মা, ছেলে-মেয়েরা মায়ের আহাজারী সামলাতে ব্যস্ত, আর যারা এখনও দাঁড়িয়ে আছে, তারাও কমবেশি উদ্বিগ্ন।
হঠাত করেই আমার কেমন দমবন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। সেন্ট্রাল এসি'র প্রায় কাঁপতে থাকা শীতের মধ্যেও আমি ঘেমে উঠলাম। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না আমার কী করা উচিত। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বোকার মতো হাঁটতে থাকলাম। কোথায়, কোনদিকে- কে জানে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন