কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ৬ জুলাই, ২০০৯

বর্ষা বিষাদ

বৃষ্টিরা জমে থাকে
থমথমে মুখে মেঘেদের বুকে
বৃষ্টিরা জমে থাকে
কার্নিশে ঝুঁকে বিষাদিত চোখে
বুড়ো কাক চেয়ে থাকে
বুড়ো কাক তা-ই দ্যাখে...

তারই ফাঁকে,
এলোমেলো প্রায় অপূর্ণতায়
পালকেরা খসে যায়
আহা পালকেরা খসে যায়...
মেঘেরা তা দেখে বিষন্ন মুখে
দূরে দূরে ঘুরে ঘুরে
সরে যেতে চায়...

দেখি উদাসী হাওয়ারা বড় দায়সারা
দেয়নাকো সাড়া মেঘেদের ডাকে
তাই-
বৃষ্টিরা ঝরে পড়ে

থমথমে মুখে মেঘেদের থেকে
বৃষ্টিরা ঝরে পড়ে
কার্নিশে বসে জলে ঠোঁট ঘষে
ঝরা পালকের ঝড়ে,
ঝ’ড়ো কাক মেঘ দ্যাখে
অসহায় কাক তা’ই দ্যাখে


(৩০.১২.২০০৫)

রবিবার, ৫ জুলাই, ২০০৯

হেমন্ত (একটি অসময়ের কবিতা)

হেমন্ত এক ব্যর্থ ঋতুর নাম
নতমুখে অলক্ষ্যে দ্বার ধরে
শিশির-ভেজা মাটিতে নখ খোঁটে
ঠাঁই যদি পায় দণ্ড-দুয়ের তরে

শরত এলো এবং চলে গেল
বর্ষা তবু ন্যাওটা ছেলের মতো
কামড়ে থাকে বাংলাদেশের মাটি
হেমন্ত তাই শুরুর আগেই গত!
পাঁজির মতে কার্তিকে স্পষ্টতঃ
দূর্গাদেবী সাজেন দশভূজা
লগন মেনেই চ্যাঁচায় কাঁশি, তবু
বলছে সবাই "শারদ-দূর্গাপূজা"

কাতিক' আগু'ন কেবল সমাদৃত
ফসল কাটার মরশুমে বাংলায়
ফসল কোথা! হেমন্তকাল তাই
এমনি আসে, এমনি'ই চলে যায়

তোমার এবং আমার কবিতা

" ঘুমের মতো শান্ত কিছু মেঘ জমেছে
দুঃখের মতো নীল-নির্জন আকাশ জুড়ে
হাওয়ার মতো বল্গাহারা ভাবনা মনে
দ্বিধার মতো প্রশ্ন কিছু দিচ্ছে ছুঁড়ে

ক্রোধের মতো তপ্ত রোদে ভিজছি যখন
প্রেমের মতো রক্তজবা চাউনি চোখে
জলের মতো তরল হাসি তোমার ঠোঁটে
আমায় কেন আঁচড়ে দিলে গরল-নোখে!

ঘুমকাতুরে মেঘবালিকা তোমার বাড়ি
খুঁজতে গিয়ে যাই ছুটে কোন্ দূরের পাহাড়
তুমিই তখন করতে লিপিবদ্ধ আমায়
পাঁজর থেকে খসিয়ে নিলে আমারই হাড়

আমিও লিপিবদ্ধ হলাম অবশেষে
লিখতে গিয়ে তোমার কথা, মনের ভুলে;
‌'কবি এবং কাব্য' কে কার তীর্থভূমি?
কেউ কোনওদিন পায় কি জবাব, প্রশ্ন তুলে! "

বুধবার, ১ জুলাই, ২০০৯

কাঁদো

কান্না যদি পেলই তবে কাঁদো
কান্না চোখে ঝাপসা দেখায় চাঁদও
ঝাপসা চোখে বিষাদ-কাজল এঁকে
তাকিয়ে আছো করুণ ইজেল থেকে
এই ছবিটাই সত্যি জেনো বটে
তাতেই তোমার সঠিক আদল ফোটে
আনন্দ কি তারচে’ ভালো লাগে!
আমারও তাই কাঁদতে ভালো লাগে

তোমার তরে কাঁদার এমন সাধ
তোমায় দেখেই নিচ্ছে মেনে বাধ
সময় যদি তোমার কাছে নেয়
বলবো, তোমার এ ভারি অন্যায়

আমায় যদি হাসতে তুমি বলো
তুমিও নাহয় অশ্রু মুছে ফেলো
দেখবে সবই, ঝাপসা চোখে চেয়ে
এমন সবুজ!বিষাদ জলে নেয়ে...

মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০০৯

গৌরাঙ্গ বচন

অদ্ভুত আঁধারে ঢেঁকে দিয়ে চরাচরে
ধান ভানে রোজ কত স্বর্গীয় ঢেঁকি
ঘোর কালো আঁধারের পটভূমি জুড়ে
কারা যেন গুণে যায় পার্থিব নেকী

অগণন জনগণ মহা জনস্রোতও
বহুমত বহুপথ বহুতে হারায়
স্বর্গের ঢেঁকিরা তাই মর্ত্যে সমাগত
সেই পুরাতন শীব-গীত গেয়ে যায়

শীব-নৃত্যে মর্ত্যবৃত্তে তাণ্ডব প্রবল
শান্তিপ্রিয় জনগণে স্বস্তিহারা চোখ
নিজভূমে পরবাসী দুস্থ প্রজাকূল
তাহাদের হত:শ্বাসে কাঁপে দেবলোক

এহেন জটিল ক্ষণে দৃশ্যপটে দেখি
উদ্ভবে স্বদর্পে এক গৌর-মহাজন
কপাল-কুঞ্চণে উদ্বেগ-রেখা মেকি
আগমন-হেতু নাকি সন্ত্রাস-দমন

গৌরজনে শুরু করে নব লীলাখেলা
গৌরাঙ্গ-বচনে হলো কান ঝালাপালা
"ভূলোক কাঁপায় যবে দানব-চিত্কার
শান্তিলাভে যজ্ঞ করো, দানব-সংহার!"

গৌরাঙ্গ বচনে বলে: "স্বর্গ দেবতার,
ধূলি-ধূষরিত মর্ত্য তাহাদের নয়;
গৌর মহাজনে জেনো মর্ত্য ঠিকাদার"
কৃপা লাভে তার, দেবও করে অনুনয়।

গৌরদেব-শিষ্যকূল মহা উল্লাসে
মর্ত্যজুড়ে বিস্তারিছে শান্তি কথামৃত
শান্তিবাণী শুনে সবে কাঁপে মহাত্রাসে
বালবৃদ্ধ নরনারী সংকটে শঙ্কিত

গৌরাঙ্গের চোখে জ্বলে বিশ্বজয়-ক্ষুধা
যখন যে ভূমি তার মনে ধরে যায়
হস্তগত করতে তাকে শান্তিবাণী-সূধা
নিজস্ব নিয়মে গৌর সকলে শোনায়

যে সকল ভূমিতলে তেজস্বী তরল
সঞ্চিত রয়েছে বিপুল পরিমাণে
সে ভূমি করিতে গ্রাস গৌর করে ছল
সন্ত্রাস দমন করে যুদ্ধ আয়োজনে

অধমের মনে জাগে শঙ্কা নানাবিধ
গৌর বলে বঙ্গভূমি ভাসে তেল-স্রোতে
তদুপরি শীব-নৃত্য, কারণ বিবিধ,
কী করে বাচাই প্রাণ গৌর-রোষ হতে!

নগরে বৃষ্টি

ধরা যাক, এ বছর বারোমাস মিলে
বৃষ্টি যা হলো, তাতে ভিজলো না মাটি
রজনীগন্ধা তবু ফুটবেই টবে
বেলীফুল সাজবে তোমার কালো চুলে।

হয়তো হবেনা স্নান নবধারা জলে,
ভেজা গায়ে জড়াজড়ি এক ছাতা-তলে,
নৌকাভ্রমনে গিয়ে শাপলা-শালুক
অযথা যাবেনা তোলা, এটুকুই দু:খ!

বিপদ যা হবে সে তো চাষাভুষোদের।
গোফে তেল কচলাবে ফড়িয়া-দালাল,
গেরস্থ ঘর বেচে সাজবে কাঙ্গাল-
এমন কী ক্ষতি তাতে হবে আমাদের?

ফাল্গুনে রাতভর বৃষ্টি না হলে
কেন যে আধার হয় চাষাদের মুখ,
কী করে বুঝবে বলো নাগরিক মন?
নগরে বৃষ্টি মানে খিচুড়ীর ভূখ!

বৃষ্টির গান

বৃষ্টিরা মেঘ হয়ে জমে থাকে আকাশের গায়ে
আমার অচল মন জুড়ে থাকে বিষন্নতা
বৃষ্টি আমায় নিয়ে বিষন্নতারই গান গায়
স্মরণ করিয়ে দেয় ঘুরে ফিরে পুরাতন কথা

হয়তো বা তাহাদেরও মন জুড়ে আছে কোনও ব্যথা
সঙ্গী মেলেনা কভু দেখাবে সে জমাট ক্ষত
আমার মগজে থাকে ছেড়া ছেড়া অস্থিরতা
মেঘেরা আমায় তাই ভাবে বুঝি তাহাদেরই মতো

বৃষ্টিরা ঝরে যেই, নাচে জলকণা... কী আনন্দ
তখনি আমার মন না-বলা কষ্টে বিষাদিত
এড়ায়না তবু চোখ বৃষ্টি ঝরার নানা ছন্দ
ক্ষণিকের তরে বুঝি আমিও হয়েছি শিহরিত

এভাবে আমায় নিয়ে বিচিত্র খেলা খ্যালে তারা
না-বোঝা ভাষায় তারা আমার সঙ্গে কথা বলে
আমায় ভাসিয়ে নেয় বর্ষার সকরুণ ধারা
আমার চোখের জল মিশে যায় নবধারা-জলে